জেড করিম জিয়া….টেকনাফ উপজেলায় নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা দুইটি ওর্যাডে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত বিভিন্ন বয়সের রোগি দেখা যায়। গতকাল ৩০ আগস্ট পর্যন্ত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শতাধিক রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদের বেশির ভাগই শিশু। এ সময় হাসপাতালের একজন সেবিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন রোগির সংখ্যা নিউমোনিয়ার চেয়ে ডায়রিয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। কয়েকদিন আগে আরও বেশি রোগি ভর্তি ছিল। তাদের সেবা দিতে গিয়ে আমরা নিজেরাই হিমশিম খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হাসপাতালে ১৬ জন সেবিকার পদ থাকলেও কর্মরত আছি মাত্র তিনজন। দুইজন প্রশিক্ষণ ও মাতৃত্বকালিন ছুটিতে থাকায় দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছি। তার উপর কোন ওয়ার্ড বয় না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদেরকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টির ও তীব্র গরম পড়ায় শরীরে ঘাম দেওয়াই পাহাড়ি এলাকাসহ উপজেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চল জোয়ারের লবনাক্ত পানিতে ডুবে থাকায় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর ও সর্দি-কাশিতে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া শিশুরা হলো হোয়াইক্যং লম্বাঘোনা এলাকার শরীফ হোসেনের মেয়ে ফাতেমা বেগম (আট মাস), মিনাবাজারের বদিউর রহমানের ছেলে রশিদুর রহমান (পাচঁ মাস), বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী এলাকার শহর আলী মেয়ে সকিনা খাতুন (দুই মাস), টেকনাফ পৌর এলাকার কুলালপাড়ার এলাকার মো ফারুকের ছেলে মো রিসাদ (৪২দিন), পুরান পল্লানপাড়ার বাসিন্দা নূরুল ইসলামের ছেলে নুর হাসান (চারমাস) ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা হাজী ফয়েজুর রহমান (৮০ বছর) হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় মারা যায়। নিউমোনিয়া আক্রান্তদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে এদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ক্ষোভ করে বলেন, নিউমোনিয়া আক্রান্তদের অবস্থা আশংকাজনক হলে ডাক্তাররা তড়িগড়ি করে কক্সবাজার রেফার করে দেন। যার কারণে রোগী নিয়ে কিছু দূর যেতে না যেতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ মনির, হাসান আহমদ, বাহারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ, হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নূর আহমদ আনোয়ারী ও সাবরাং ইউপির (প্যানেল-১) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাঈল শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ আতাউর রহমান বলেন, ঋতু পরিবর্তনের ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া অসচেতনতার অভাবে এরোগ সহজে প্রভাব বিস্তার করে। অভিভাবকরা একটু সচেতন হলে রোগগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব।
এসব রোগে আক্রান্ত হলে কবিরাজ ও গ্রাম্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক আবদুল মান্নান বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টির পাশাপাশি হঠাৎ গরম অনুভূতি হওয়ায় শরীরে ঘাম শুকিয়ে মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময়ে টেকনাফে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একটু বেশি হলেও আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
Leave a Reply