রফিক উদ্দিন বাবুল, …উখিয়ার আড়াই লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে উখিয়ার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করে উদ্বোধনের মাসাধিকাল পার হয়ে গেলেও সমপ্রসারিত ভবনে চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই বহুতল ভবনটি কি কারণে তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় উখিয়া হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় প্রায় শতাধিক মহিলা রোগী বাচ্চা কোলে নিয়ে বহির্বিভাগের টিকেট কাউন্টারে লাইন ধরে অপেক্ষা করছে। একইভাবে হাসপাতালের বাইরের বারান্দায় দেড় শতাধিক পুরুষ রোগী ডাক্তারের জন্য অপেক্ষরত। হারাশিয়া গ্রাম থেকে আসা মহিলা রোগী মরিয়ম খাতুন (৪৫) জানালেন, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে সকাল থেকে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছে। এখনও পর্যন্ত টিকেট পায়নি। একইভাবে বহির্বিভাগে অপেক্ষমাণ রোগীদের অভিযোগ ডাক্তার না আসার কারণে তারা সাক্ষাৎ করতে পারছেন না। হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় ডাক্তার রিদুয়ান মহিলা রোগীদের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। তিনি জানান, নাইট ডিউটি করে একজন ডাক্তার বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাই তাকে একাই সামলাতে হচ্ছে। পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আবু সাঈদের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, ১২ জন ডাক্তারের স্থলে আছে মাত্র ৩ জন। ৯ জন নার্সের স্থলে ২জন দিয়ে কোনভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। সমপ্রসারিত ১৯ শয্যার কার্যক্রম কেন বন্ধ রাখা হয়েছে, জবাবে তিনি বলেন, ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার মত লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম যেখানে অপ্রতুল সেখানে বর্ধিত হাসপাতাল ভবন চালু করার কোন মানে হয় না। তিনি বলেন, হাসপাতালের বেড ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী দেওয়া হলে ওটা চালু করা হবে।
জানা গেছে, এ হাসপাতালে একটি আধুনিক উন্নতমানের এক্সরে মেশিন ২০০৪ সালে সরবরাহ দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত এক্সরে মেশিনের বাক্স খোলা হয়নি। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে ওই মেশিনটি বর্তমানে অচল হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় কর্মচারীরা মনে করেন। এছাড়াও মেডিসিন স্টোরে রক্ষিত মূল্যবান ওষুধের গুণগত মান সংরক্ষণের জন্য দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হলেও সেগুলো অচল হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকার কারণে সেটি অনেক সময় জরুরি কাজে ব্যবহৃত হয় না।
জানা গেছে, এ হাসপাতালটি ১৯৬৫ সনে প্রতিষ্ঠিত হলেও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৬ সালের মে মাসে। শুরুতেই ১০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়ে ১৯৭৭ সালে উক্ত হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত হয়। হাসপাতালে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ১ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ৪জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ৩ জন কনসালটেন্ট, ১ জন সার্জারি, ১ জন গাইনী, ১ জন মেডিসিন, ১ জন এনেসথেসিয়া ও ১ জন ডেন্টাল সার্জনসহ ৯ জন নিয়ে ৬৭টি পদের মধ্যে ৩৭টি পদে শূন্যতা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন যাবত। ২০১০ সালে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি এ হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ও সংসদ অধিবেশনে বার বার বিবৃতি প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তা অনুমোদন করে। ২০১১ সালে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে ১৯ শয্যার হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ৩ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
গত জুন মাসের শুরুতে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নবনির্মিত হাসপাতাল ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও এ পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সিভিল সার্জন ডা. কাজল কান্তি বড়ুয়া বলেন, দেশে ডাক্তারের অভাব রয়েছে। তবুও এ হাসপাতালের জন্য অতিসত্বর ডাক্তারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং হাসপাতালের বেড থেকে শুরু করে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
Leave a Reply