এম বশর চৌধুরী, উখিয়া, উখিয়ার ইনানী জাতীয় উদ্যান ও রক্ষিত বনাঞ্চলে চলছে লোটপাটের মহোৎসব। সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারী চক্র স্থানীয় বন বিভাগ ম্যানেজ করে গত কয়েক মাস ধরে এসব বনাঞ্চলের মূল্যবান চারা গাছ কাঠ কেটে জীপ ও ডাম্পার গাড়ী যোগে পাচার করছে অনেকটা বিনা বাধায়। এসব চারা গাছ গুলো বড় হওয়ার সুযোগ পেলে একদিকে বনায়ন বৃদ্ধি পাবে অপর দিকে আগামী কয়েক বছর পর গাছ বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। এমন অভিমত সচেতন মহলের।
জানা যায়, অভয়ারণ্য, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে প্রকৃতির সৃষ্টি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে ২০০৯ সালে ১০ হাজার হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অভ্যন্তরে বনায়ন সৃষ্টি, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও বনজ সম্পদ রক্ষার সুদূর প্রসারী উদ্যোগ গ্রহণ করে বন বিভাগ। এনজিও স্ংস্থা শেড, আরন্য ফাউন্ডেশন সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ইক্যু ট্যুরিজম স্পট ও বনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার জন্য উক্ত প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে ১০ হাজার হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিপুল পরিমান বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ রোপন করা হয়েছিল। কিছু কিছু এলাকায় আরও বিস্তীর্ণ বনভূমি সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হয়েছিল। এসব রক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষার জন্য ৬৬ জন বন পাহারা দলের সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। বন পাহারা দলের সাবির্ক সহযোগীতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকায় কয়েক বছরের ব্যবধানে ইমামের ডেইল, মাদারবুনিয়া, চোয়াংখালী, রূপপতি, মনখালী এলাকার বনায়ন গাছে গাছে ভরে যায়, সৃষ্টি হয় অভয়ারণ্য। রক্ষিত বনাঞ্চল পাহারাদলের সভাপতি আয়ুব আলী, সদস্য ছৈয়দ আলম, অভিবাবক দলের সদস্য মোজাফ্ফর, বন নির্ভর দলের সদস্য ছৈয়দ কাশেম, আবুল কাশেম সহ অনেক লোেেকর অভিযোগ, রক্ষিত বনাঞ্চল কমিটির কর্নধার অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিদেশ সফর ও রক্ষা কমিটির সচিব অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করার সুযোগে এবং বন রক্ষা দলের আরেক কর্নধার উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহ জালাল চৌধুরী মামলার কারনে পলাতক থাকায় ও সদ্য বদলীয় হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদলী জনিত কারনে ব্যস্ত থাকায় সংঘবদ্ধ কাঠ চোরের ব্যাপরোয় হয়ে উঠে। গত ১৫ দিনে কাঠ চোরেরা প্রতিদিন শত শত স্থানীয় ও রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে কাঠ কেটে এক স্থানে জমা করে পরবর্তীতে জীপ ও ডাম্পার গাড়ী নিয়ে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ও কোটবাজার, উখিয়া ও কক্সবাজার শহরে সরবরাহ করে আসছে। সংঘবদ্ধ কাঠ চোরের গত ১ মাসে কম পক্ষে ৩০ হাজার চারা গাছ কেটে সাবাড় করেছে। কাঠ পাচার ও কাটার ব্যাপারে চোয়াংখালী বিট কর্মকর্তা ফখর উদ্দিন মজুমদার, ইনানী রেঞ্জ কর্মকতা, উখিয়ার এসিএফ মোটা অংকের টাকা নিয়ে সার্বিক সহযোগীতা করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়ন থেকে প্রতিদিন যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে তাহা দেখলে দেশে বন আইন এবং আইনের শাসনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এলাকাবাসী কাঠ পাচারের বিষয় স্থানীয় বন বিভাগকে বার বার অবগত করেও কাজ হয় না। মাঝে মধ্যে বন বিভাগ লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও কাঠ চোর ও কাঠ পাচারকারীরা থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে। অচিরেই কাঠ পাচার বন্ধ না করলে ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের অস্থিত্ব থাকবেনা। এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের কমীরা।
Leave a Reply