এস.এম.তারেক…..কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদে গৃহবধু গোলজারের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সে কক্সবাজার থানা মামলা নং ৪০’র বাদীএবং বিবাদীদের কয়েকদফা আক্রমনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ময়না তদন্ত ছাড়াই মৃত্যুর ৬ ঘন্টা পর তার লাশ প্রতিপক্ষ সমর্থিত লোকজনের কৌশলী ভুমিকার কারনে অনেকটা তড়িঘড়ি করে দাফন করা হয়েছে বলে শামশুল আলমের পরিবারের অভিযোগ। সরেজমিনে পরিদর্শন কালে এলাকার লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে., উত্তর পাঁহাশিয়াখালী গ্রামের শামশুল আলমের স্ত্রী গোলজারের এ করুণ মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে অনেক অজানা তথ্য। মুলতঃ জায়গা জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ এবং এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের মানসিক চাপ ও শারিরীকভাবে নির্যাতনের কারনেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকাবাসীর ধারনা। জানা যায়, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের উত্তর পাঁহাশিয়াখালী গ্রামের শামশুল আলমের স্ত্রী ৩ সন্তানের জননী গোলজার বেগমের সাথে একই এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর তিন পুত্র যথাক্রমে- লেদু মিয়া, গিয়াস উদ্দিন, রশিদ মিয়া ইব্রাহীম ও আহমদ আলীর পুত্র শফিক আহমদ গোলজার বেগমের পার্শ্বে লাগোয়া একখন্ড জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গোলজারের স্বামী শামশুল আলম নিরক্ষর ও সরল প্রকৃতির লোক হওয়ায় গোলজার নিজেই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সালিশ বৈঠকে নিজেই তদবীর চালিয়ে আসছিলেন। গোলজারের স্বামী শামশু জানান, গত ২/৩ বছর আগে লেদুর ভাই গিয়াস উদ্দিন বিরোধীয় জমিটি বিক্রয়ের উদ্দেশ্য গোলজারের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় যথাযথ প্রমান পত্র মুলে ৪৫ হাজার টাকা নেন এবং জমির দখলও বুঝিয়ে দেন এবং সেখানে গোলজার গাছ বাঁশের তৈরী ঘর ও টিউবওয়েল স্থাপন করেন। দাম পরিশোধের পর গোলজার বেগম গিয়াস উদ্দিনকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে চাপ সৃষ্টি করলে গিয়াস উদ্দিন বেঁকে বসে। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হলে ২/৩ মাস আগে গিয়াস তার ভাইদের সহায়তায় নির্মিত ঘর ভেঙ্গে দেয় ও টিউবওয়েলটি নিয়ে যায়, এবং বাধা বাধা দিতে গেলে গোলজারকে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে মারাতœকভাবে আহত করে। এ ঘটনায় গোলজার গোলজার বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৭ জনকে আসামী করে নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। মামলা পরবর্তী সময়ে তদন্তকালি কর্মকর্তা ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক টু আইসি আনোয়ারুল হক অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী ও লুটপাট কার্যক্রমে জড়িত গিয়াস উদ্দিন, ইব্রাহীম ও লেদু মিয়াকে গ্রেফতার করে। এদিকে নিয়মিত মামলার ৩ নং আসামী পলাতক রশিদ মিয়া বাদী হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস. আই আনোয়ারুল হক ও অভিযানে অংশ নেয়া এ.এস. আই জামাল এবং মামলার বাদী গোলজার ও তার স্বামী শামশুল আলমকে আসামী করে কক্সবাজারের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতে একটি মামলা করেন। নং- পি. আর ৬০১২। এতে করে অসহায় গোলজার বেগম আরো বেকায়দায় পড়ে যান নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায় বলে তার স্বামী শামশুল আলম জানায়। পরে সর্বশেষ হামলার ঘটনায় তার মাথা ও শরীরে বিভিন্ন প্রচন্ড চোট লাগে বলে গোলজারের স্বামী ও পুত্র ফার্নিচার মিস্ত্রী মামুন (২০) জানান। স্থানীয় কয়েকজন মুরব্বী জানান, গোলজার বেগম একজন সাহসী ও প্রতিবাদী মহিলা ছিলেন এবং গত ইউপি নির্বাচনে তিনি মহিলা সদস্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্তিা করেন। তার মৃত্যুর পর স্বামী ও সন্তানেরা অসহায় হয়ে পড়েছে এবং তাদের প্রতিবাদের কোন সামর্থ্য ও সাহস নেই বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। এছাড়া এ ব্যাপরে প্রতিবাদ করলেই তাদের গ্রাম ছাড়া করা হবে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেন। এদিকে সন্ত্রাসীদের পক্ষে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বশীভূত হয়ে স্থানীয় কতিপয় চিহ্নিত প্রভাবশালীি ব্যাক্তি পুলিশের কর্মকান্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে অসহায় মহিলাকে ঘায়েলের সুযোগ করে দেয়। আঘাতপ্রাপ্ত শরীর নিয়ে গোলজার বেগম সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আলম , বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ও প্রশাসনের ধর্না দিয়ে একাধিক বৈঠক হলেও প্রতিপক্ষ নাছোড় বান্দার মত তার পেছনে লেগে থাকে। চেয়াম্যান জাফর আলম জানান, তার নের্তৃত্বে বসা সালিশ বৈঠকে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে রায় গোলজারের পক্ষে যায়। কিন্ত প্রতিপক্ষরা সে রায় কার্যকর করেনি। তিনি আরো বলেন, প্রতিপক্ষের শারিরীক ও মানসিক চাপ সইতে না পেরে গোলজার অকালে প্রাণ হারান। এদিকে ওই ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হুমায়ুন জানান, তার মৃত্যুর ৩ দিন পুর্বে গোলজার বেগম তার বাসায় এসে প্রতিপক্ষের হামলার আঘাতের কথা চিহ্ন হুমায়ুন ও তার স্ত্রীকে দেখান এবং চোখের জল ফেলে ঘটনার বিবরণ দেন বলে দাবী করেন। এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া মৃত্যুর ছাড়পত্রেও হেড ইনজুরির কারণে গোলজারের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ রয়েছে বলে স্থানীয় মমতাজুল ইসলাম খান জানান। ওই ইউনিয়নের গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যানপ্রার্থী ও শ্রমিক নেতা সেলিম আকবর জানান, গোলজারের উপর যে অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছে তা সত্য। ঈদগাঁও পুলিশের আইসি কবির হোসেন জানান, তিনি গোলজারের মৃত্যুর খবরটি শুনে থাকলেও অদ্যাবধি এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেয়নি। ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক জানান, গোলজার বেগমের সাথে প্রতিপক্ষের জায়গা জমির বিরোধ বলে বলে জানতাম। ঈদগাঁও জাহানারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, গোলজার বেগমের সাথে প্রতিপক্ষের বিরোধীয় তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং কোন বৈঠকেই বিরোধের সুরাহা হয়নি। ওয়ার্ড মেম্বার আবদুর রজ্জাক জানান, দুগ্রুপের মধ্যে দীর্গদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল বলে জানি। এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ গ্রুপের রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গোলজার বেগমের সাথে বিরোধের কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
৭/৯/১২
Leave a Reply