বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর শরিয়া আইন প্রয়োগের বক্তব্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বিমুখী নীতির প্রকাশ ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, “এরা (আওয়ামী লীগ) নিজেদের ধর্ম নিরপেক্ষ দল হিসেবে দাবি করছে, অন্যদিকে শরিয়া আইনের কথা বলছে।
“আওয়ামী লীগ ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্র্ড’ দল। তাদের পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব।”
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের একদিন পর শনিবার টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানীর স্মরণসভায় একথা বলেন বিএনপির মুখপাত্র।
শেখ হাসিনা শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের সতর্ক করে বলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিকল্প পথ আমাদের জানা আছে। দরকার হলে শরিয়া আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
মওলানা ভাসানীর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সন্তোষে তার সমাধি প্রাঙ্গণে সভার আয়োজন করে জেলা টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি।
জেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ আযম খানের সভাপতিত্বে সভায় ফখরুল ছাড়াও বক্তব্য করেন তরিকুল ইসলাম, মারুফ কামাল খান সোহেল, মাহমুদুল হাসান, নুর মোহাম্মদ খান, শিরীন সুলতানা, সামছুল আলম তোফা প্রমুখ।
সভার আগে ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপি নেতারা মওলানা ভাসানীর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মওলানা ভাসানীর অবদান তুলে ধরে বিএনপি নেতা ফখরুল বলেন, “আজীবন গরীব ও মেহনতি মানুষের পাশে থেকে তাদের অধিকার আদায়ে লড়াই করে গেছেন তিনি। আমরা ক্ষমতায় থাকতে তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করিনি।”
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানীর মূল্যায়ন দলটিও করে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতাকেও স্বীকার করে না। তারা এতই অকৃতজ্ঞ যে শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দীকেও স্মরণ করে না।”
১৮৮০ সারের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জন্ম। ১৮৯৭ সালে তিনি ভারতের আসাম পাড়ি জমান। সেখানে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
১৯২৪ সালে আসামের ধুবরী জেলায় ব্রক্ষ্মপুত্র নদের ভাসান চরে মাওলানা ভাসানী আয়োজন করেন ঐতিহাসিক সম্মেলন। এরপর থেকে তার নামের শেষে ‘ভাসানী’ যুক্ত হয়।
মওলানা ভাসানী ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে তার নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়, পরে এই দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়।
বিদেশ নীতি নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দিলে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করেন ভাসানী। এই সম্মেলনেই তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যার নাম হয়- ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)’।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন ভাসানী।
১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারামুক্তির জন্য দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুললেও স্বাধীনতার পর তার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে মওলানা ভাসানীর। ১৯৭৪ সালে তাকে গৃহবন্দিও করা হয়।
ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ভাসানী, দেশের মানুষ যাকে মজলুম জননেতা হিসেবে চেনে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/
Leave a Reply