পৃথিবীর অন্যতম নির্ভার মানুষটির নাম এখন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। কারণ, গতকাল বৃহস্পতিবার জীবনের একটা বড় কলঙ্কের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে ২০০০ সালে ক্রিকেট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি। গতকাল অন্ধ্র প্রদেশের একটি আদালত সাবেক ভারতীয় অধিনায়কের সেই বহিষ্কারাদেশকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন।
আদালতের মতে, কোনো সাবেক অধিনায়ককে ক্রিকেট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করার এখতিয়ার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নেই। সে হিসেবে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকেও আজীবনের জন্য ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করতে পারে না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
আদালতের এই রায় শুনে দারুণ খুশি মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি জানি না এখন ক্রিকেট বোর্ড কী ব্যবস্থা নেবে। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, আমি আমার নিজের বিবেকের কাছে সব সময়ই পরিষ্কার ছিলাম।’
আজহারউদ্দিন বলেন, ‘আমি সব সময়ই ভারতীয় ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের কল্যাণের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।’
এক যুগ ধরে বয়ে বেড়ানো এই কলঙ্কের জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেবেন না বলেই জানিয়েছেন আজহারউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী নই। কারণ, আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। এক যুগ আগে ওই কলঙ্ক আমার ভাগ্যে ছিল। ওটা এখন অতীত। যা ঘটে গেছে, তা গেছে। ওটা নিয়ে এখন আর জল ঘোলা করতে চাই না।’
আর কিছুদিন পরেই পঞ্চাশ বছরে পা রাখতে যাওয়া ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার বিবেক পরিষ্কার। আমি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছি। সর্বোচ্চ সততা নিয়ে ক্রিকেট খেলেছি। ক্রিকেটের সঙ্গে কখনো বেইমানি করিনি। তবে আমার জীবনে যা ঘটে গেছে, সেটা নিয়ে কাউকে দায়ী করি না। কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে মানসিকভাবে প্রস্তুতও নই আমি।’
ক্রিকেট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত হওয়ার পর সেই অসহনীয় মুহূর্তগুলো কীভাবে কেটেছে, সেগুলো আর মনে করতে চান না আজহারউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। ব্যাপারটি আমার ভাগ্যে লেখা ছিল। গত ১২ বছর অনেক মানুষের মানসিক সমর্থন আমি পেয়েছি।’
আজহারউদ্দিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রয়াত সভাপতি রাজসিংহ দুঙ্গারপুরকে। বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন কপিল দেবকেও। তিনি বলেন, ‘দুঙ্গারপুর বেঁচে থাকতে আমাকে অনেক সমর্থন করে গেছেন। কপিল পাপাজি সব সময়ই আমার সমর্থনে ছিলেন সোচ্চার।’
ক্যারিয়ার ৯৯ টেস্টেই থেমে গিয়েছিল বলে কোনো আক্ষেপ নেই আজহারউদ্দিনের। স্রষ্টার ইচ্ছায় বিশ্বাসী আজহার বলেন, ‘আল্লাহ হয়তো চেয়েছিলেন যে আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার হবে ৯৯ টেস্টের। সে জন্য ওটা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। আমি সামনের দিকে তাকাতে চাই। আমি এখন একজন সাংসদ। আমি আমার নির্বাচনী এলাকা মোরাদাবাদের মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’
এদিকে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আপাতত অন্ধ্র প্রদেশ আদালতের এই রায় নিয়ে বিশ্লেষণে বসবে বলে জানিয়েছেন বিসিসিআইয়ের আইন বিষয়ক পরিচালক রাজীব শুক্লা। যেহেতু আজহারউদ্দিন বোর্ডের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে চান না, তাই আজহারের ব্যাপারে বোর্ডের পরবর্তী পদক্ষেপ অনেকটা সহানুভূতির হবে বলেই আভাস পাওয়া গেছে। ইএসপিএন-স্টার।
Leave a Reply