নিষিদ্ধঘোষিত মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা যে কোনো রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট পরিবারের কোনো সদস্যের আত্মীয়-স্বজন জড়িত রয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাক্ষীর তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের ব্যাপারেও তদন্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত যে-ই হোক, তাদের তালিকা তৈরি করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা বাহিনী ও র্যাব খুব আন্তরিকতার সঙ্গে জঙ্গি নির্মূলে কাজ করছে। এ অভিযোগে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।”
তিনি জানান, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিতে আসা ব্যক্তিদের ব্যাপারে তদন্ত করা হবে।”
সম্প্রতি অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে আসা ১৫ সহস্রাধিক সাক্ষীর ব্যাপারে তদন্ত করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নিজ জেলা পাবনা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান মাসুদের ভাতিজা মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের অন্যতম কথিত ক্যাডার সাইদুর রহমান শিহাব গ্রেফতার হবার পর এ তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়।
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকের পারিবারিক সম্পর্কের গভীর যোগসূত্র গড়ে ওঠা নিয়ে নানা কথা রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধীরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই নানা কৌশলে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নানা পর্যায়ে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্রে তথ্য পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে যাবতীয় খোঁজ-খবর নিয়ে ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততা’ পাওয়া গেলে সেসব রাজনৈতিক নেতার তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”
গেল সপ্তাহে রাজধানীর পল্লবী থানা পুলিশ ধর্মীয় উদ্দীপনামূলক লিফলেট ও বইপত্রসহ পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান মাসুদের ভাতিজা সাইদুর রহমান শিহাব এবং আরো একজনকে গ্রেফতার করে। এ মামলাটি ঢাকা মাহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ।
অপরদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের শীর্ষ চার নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও কামারুজ্জামানের পক্ষে ১৫ সহস্রাধিক সাক্ষীর নামের তালিকা আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন শিবিরের সদস্য রয়েছে বলে একাধিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলেও সরকার বিষয়টি তেমন পাত্তা দেয়নি।
এদিকে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দিল নেওয়াজ খানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগিতার একাধিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে দিলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সৈয়দপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের এক নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, “পারিবারিকভাবেই স্বাধীনতা বিরোধী দিল নেওয়াজ খান। তার পিতা নঈম খান ওরফে নঈম গুন্ডার বিরুদ্ধে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পার্বতীপুরে একাধিক নিরীহ বাঙালিকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে ও ভুল বুঝিয়ে তার চাহিদাপত্রের (ডিও লেটার) মাধ্যমে দিল নেওয়াজ শিবিরের দু’কর্মীকে পুলিশে চাকরি দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের প্যাডে লিখিতভাবে এ অভিযোগটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।”
Leave a Reply