হুমায়ুন রশিদ,টেকনাফ । দেশে কাজের অভাব ও রুজি-রোজগার না থাকায় সংসারের সদস্যদের মুখে একটু সুখের হাসি ফোটানোর জন্য স্বপ্নের মালয়েশিয়া যেতে গিয়েই পাহাড় ও সাগরে যাত্রীদের মৃত্যু এবং পৈশাচিক নির্যাতনে মানবেতর দিন কাটানোর পরও চলতি বর্ষায় উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে টেকনাফ উপকূল দিয়ে ট্রলার যোগে স্বপ্নের মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে ক্ষুধার যন্ত্রনায় অনাহারে অর্ধাহারে থাকা লোকজনকে সাগরে বস্তা বন্দি করে ফেলে দেওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে । এ ছাড়া ৮৫ হতভাগ্যদের আরো টাকার জন্য থাইল্যান্ডের গহীন বনে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের আওয়াজ শোনানো হচেছ স্বজনদের কানে। বিগত বিভিন্ন সময়ে দালাল চক্র টেকনাফের উপকূল টেকনাফ,উখিয়া,কোটবাজার,রামু,কক্সবাজার চরপাড়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া,চট্রগ্রাম,কুমিল্লা,যশোরসহ বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য লোকজনকে স্বপ্নের মালয়েশিয়া
নিয়ে যাওয়ার নামে প্রতারনার মহা ফাঁদ তৈরী করে । এতে অনেকে সাগরে মৃত্যু,অনেকের অনাহারে-অর্ধাহারে বনে বন্দি ও জেল জীবন ,আবার অনেকের নিজের স্ত্রী ও মা-বোনের স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা অর্ত হারিয়ে সর্বশান্ত হচেছ।দালালদের নৃশংসতা নিয়ে চলছে হতভাগ্যদের পরিবার ও স্থানীয় জনমনে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া । মালয়েশিয়া আদম পাচারকারী দালালদের সনাক্ত করে কঠিন শাস্থির পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী করছে সুশীল সমাজ ।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়- অবিশাস্য হলেও সত্য বর্ষায় প্রতিকুল অবস্থাতেও টেকনাফে আদম পাচারকারী চক্র সমুদ্র পথে বিভিন্ন দরিদ্র ও বেকার লোকজনকে কমমূল্যে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৫ জুলাই রাতে টেকনাফের উপকূল দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ছাড়াও হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, লম্বাবিল, রইক্ষ্যং, কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার ৩০/৩৫ বাসিন্দাসহ ৯০জন বনি আদম নিয়ে একটি ট্রলার মালয়েশিয়া অভিমুখে রওয়ানা করে। উক্ত ট্রলারটি
মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের সমুদ্র উপকূলে জলোচ্ছাসের কবলে পড়ে এবং গভীর সমুদ্রে একাধিকবার ইঞ্জিন বিকল হয়ে সাগরে দিক-বেদিক ভেসে যায়। দীর্ঘ ৮/১০দিন সাগরের ভাসতে থাকায় উক্ত ট্রলারে অধিকাংশ লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব লোকজনের মধ্যে ২ রোহিঙ্গা খাদ্যের অভাবে ক্ষুধায় কাতর হয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থায় ট্রলারে থাকা দালাল চক্রের লোকজন তাদের বস্তাবন্দি করে সাগরে নিক্ষেপ করে দেয়। এছাড়া ট্রলারে ২দফা মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।দালার চক্র জনপ্রতি ১লাখ ৯০হাজার টাকা চুক্তি করে চট্রগ্রাম বন্দরের জাহাজযোগে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও টেকনাফের সাবরাং উপকূল দিয়ে একটি ট্রলারে করে মালয়েশিয়া রওয়ানা দেয়ায় আপত্তি তুললে হোয়াইক্যংয়ের রইক্ষং এলাকার আব্দুল জাব্বার নামক এক মালয়েশিয়াগামীকে বেধড়ক পিটিয়ে বস্তাবন্দি করে সাগরে ফেলে দিতে চাইলে তার সর্ঙ্গীয় লোকজন ও দালাল চক্রের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষ বাধেঁ। অবশেষে সাগরে লংকাকান্ডের শিকার ট্রলারটি ক্ষুধায় অসুস্থ মালয়েশিয়াগামীদের নিয়ে প্রায় ১২ দিন পর থাইল্যান্ড উপকুলে পৌঁছে। সেদেশে অবস্থান করা দালাল চক্রের লোকজন এসব হতভাগ্যদের গহীন বনে নিয়ে বন্দি করে রাখে। তাদেরকে থাইল্যান্ড থেকে যানবাহনে করে চোরাই পথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু চুক্তির টাকা না দেয়ায় শতাধিক হত-দরিদ্র লোকজনকে এখনো গহীন বনে বন্দি রেখে ব্যাপক নির্যাতন চালাচেছ বলে জানা গেছে। হতভাগ্যদের প্রাপ্য টাকা দাবী করে গহীন বনে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের আওয়াজ শোনানো হচেছ স্বজনদের কানে। বন্দিদশা থেকে মুঠোফোনে নিজেদের পরিবারে যোগাযোগ করে এ তথ্য জানিয়েছে হোয়াইক্যং ,উনছিপ্রাংসহ বিভিন্ন এলাকার হতভাগ্য লোকজন । এ দিকে নির্যাতনের শিকার ও নিখোঁজদের পরিবারে শোকের যন্ত্রনায় কান্নার ঢেউ উঠেছে । যা আশ-পাশের পরিবেশকে ভারী করে তুলেছে। মালয়েশিয়া যাত্রাকালে বিভিন্ন দেশে আটক ও সাগরে মৃত্যুর খবরে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ।
অপরদিকে গত ৮ জুন টেকনাফের সাবরাং উপকুলীয় এলাকা দিয়ে একটি ট্রলারে করে শতাধিক লোকজন মালয়েশিয়া যাত্রা করে । এসব লোকজনের মধ্যে সাগরে দূঘর্টনায় অনেকের মৃত্যু ও মিয়ানমার কারাগারে আটকের খবরে স্বজনদের মধ্যে কান্নাররোল বাড়ছে। উক্ত ট্রলারে হোয়াইক্যংয়ের কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার আব্দুর রহিমের পুত্র আবছার, ধলা মিয়ার পুত্র সরওয়ার, আব্দু শুক্কুরের পুত্র হারুন, সফু মিয়ার পুত্র আজিজুল হক, আবু তালেকের পুত্র মোঃ রফিক, কবির আহমদের পুত্র আনিসুর রহমান, নুরুল আলমের পুত্র সোনা মিয়া, নুর আহমদের পুত্র জসিম, উনচি প্রাং এলাকার অমির হামজার পুত্র আব্দু করিম, আব্দুর রহমানের পুত্র শাহ আলম, রইক্ষং এলাকার কালু মিয়ার পুত্র আবু ছিদ্দিক, উখিয়ার পালংখালী এলাকার মোহাম্মদের পুত্র নুরুল কবির, লেদা রোহিঙ্গা বস্তি এলাকার রহমত উল্লাহ, নজির আহমদসহ ১২০ জন আদম ভর্তি করে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগর উত্তাল হয়ে উঠায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সাগর পথে আদম পাচার বন্ধ রয়েছে বলে ধরে নেয়। কিন্তু লোভী-নাছোড় বান্দা দালালেরা কি আর সুযোগ হাত ছাড়া করে । সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর ইন্দনে মুসলিম নির্যাতনে অতিষ্ঠ মুসলিম যুবকেরা সহায় সম্বল বিক্রি করে প্রাণে বাঁচার জন্য মালয়েশিয়া পালাতে গিয়েই এসব দালালদের খপ্পরে পড়েছে রোহিঙ্গা ও ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর দেশীয় বেকার মানুষেরা।
বেকার যুবকদের কম দামে মালয়েশিয়া নেওয়ার নামে মানবতা বিরোধী নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়কারীরাসহ আদম পাচারকারী চিহ্নিত সব দালালদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্থির সম্মুখীন করতে হবে বলে সর্বস্তরের মানুষ মনে করেন।
Leave a Reply